শনিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, English Version, ইপেপার

শিমের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে?

শিমের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে?

শিমের বিচি আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। অনেকেরই একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে – “শিমের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে?” আসুন জেনে নিই এই প্রশ্নের উত্তর এবং শুকনো শিমের বিচির উপকারিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।  আরও পড়ুন: লেবুর যত উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

শিমের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে?

শিমের বিচি উচ্চ ফাইবার এবং প্রোটিনযুক্ত একটি খাদ্য। এটি এমন একটি খাবার যা শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে। দেখা গেছে, শিমের বিচিতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ থাকলেও এটি সাধারণত ধীরে হজম হয়, ফলে দ্রুত রক্তে শর্করা বেড়ে যায় না। এটি খেলে দীর্ঘসময় ধরে পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

আরও পড়ুন: পেটের মেদ কমাতে সহায়ক ১০টি সেরা খাবারের তালিকা

যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য শিমের বিচি ভালো অপশন হতে পারে, কেননা এটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ এবং ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তবে, সঠিক মাত্রায় খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।

শিমের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

শিমের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে জানলে এটি খাবার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। শিমের বিচি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা শরীরের নানা উপকার করে। তবে, অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে কিছু অপকারিতাও হতে পারে।

শিমের বিচির উপকারিতা

শিমের বিচি প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস, যা শরীরের পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং কোষের পুনর্গঠনে সহায়ক। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ, যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। ফাইবারের উপস্থিতির জন্য এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। শিমের বিচিতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।

এই খাবারে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। শিমের বিচি কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর। শিমের বিচির লো ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারের কারণে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

আরও পড়ুন: মেয়েরা রসুন খেলে কি হয়?

শিমের বিচির অপকারিতা

শিমের বিচি অতিরিক্ত খেলে পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন—গ্যাস, ফোলাভাব ও পেট ব্যথা। এর মধ্যে ল্যাক্টিন নামক একটি প্রোটিন রয়েছে, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি হালকা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে যদি অপর্যাপ্ত রান্না করা হয়, তাই সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়াই ভালো। কিছু মানুষ শিমের বিচির প্রতি সংবেদনশীল হতে পারেন, বিশেষত যারা শিমজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে। এটি অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

যারা গাউট বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে শিমের বিচি সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া উচিত কারণ এতে পিউরিন রয়েছে, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: রাতে আদা খেলে কী হয়: স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রভাব

শুকনো শিমের বিচির উপকারিতা

শুকনো শিমের বিচি, যেটি অনেক সময় বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিচে শুকনো শিমের বিচির কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

প্রোটিন সমৃদ্ধ: শুকনো শিমের বিচিতে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যা মাংসপেশির গঠনে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্য এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।

শিমের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে?

ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস: শুকনো শিমের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। নিয়মিত শুকনো শিমের বিচি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : এতে রয়েছে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে শুকনো শিমের বিচি খাওয়া উপকারী হতে পারে।

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: শুকনো শিমের বিচি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হার্টের জন্য বিশেষভাবে উপকারী এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: শুকনো শিমের বিচির ফাইবার ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যারা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তারা শুকনো শিমের বিচি খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : শুকনো শিমের বিচিতে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুন : ৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায়

কিভাবে শুকনো শিমের বিচি খাবেন?

শুকনো শিমের বিচি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়, যেমন:

  • রান্না করা স্যুপ হিসেবে
  • সালাদে মেশানো অবস্থায়
  • ভর্তা করে
  • ভেজে স্ন্যাক্স হিসেবে

শিমের বিচি, বিশেষত শুকনো শিমের বিচি, আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হওয়া ছাড়াও, প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।

শিমের বিচিতে কোন ভিটামিন

শিমের বিচিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে যে ভিটামিনগুলো থাকে তা হলো:

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: শিমের বিচিতে ভিটামিন বি-এর বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে, যেমন – ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন), ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন), ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন), এবং ফোলেট। এগুলো শরীরের শক্তি উৎপাদন, মস্তিষ্কের কার্যক্রম, এবং রক্তের সঠিক সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন সি: শিমের বিচিতে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ভিটামিন কে: শিমের বিচিতে ভিটামিন কে থাকে, যা রক্ত জমাট বাঁধায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই ভিটামিনগুলো শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

শিম খাওয়ার উপকারিতা

শিমে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক। এটি পেশী গঠনে সাহায্য করে, হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। শিমে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মুক্তমূলকণার ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। শিম রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। শিমে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের গঠন এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

শিম খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত শিম খেলে ফাইবারের কারণে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজমের সমস্যা হতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শিমজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে, যা ত্বকের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। অপর্যাপ্ত রান্না করা শিমে ল্যাক্টিন নামক প্রোটিন থাকে, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি বিষাক্তও হতে পারে। শিমে পিউরিনের উপস্থিতি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই কিডনি বা গাউট সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য এটি সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া উচিত। এছাড়া শিমে ফাইটেট থাকায় এটি আয়রন শোষণে ব্যাঘাত ঘটায়, যা আয়রনের ঘাটতিতে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শিম খাওয়ার সময় সঠিক পরিমাণ এবং সঠিকভাবে রান্না করার বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন, যাতে এর উপকারিতা পাওয়া যায় এবং অপকারিতা এড়ানো যায়।

শিম কাদের খাওয়া উচিত নয়?

শিম খাওয়া কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত নয়, বিশেষত যারা নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় আছেন।

যাদের গাউট বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে: শিমে পিউরিন থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। গাউট বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

কিডনি সমস্যায় ভুগছেন যারা: শিমে থাকা পিউরিন কিডনিতে চাপ ফেলে এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা কিডনির সমস্যা আরও বাড়াতে পারে। তাই কিডনি সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য শিম খাওয়া উপযুক্ত নয়।

অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তি: শিমজাতীয় খাবার অনেকের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা শিমজাতীয় খাবারে সংবেদনশীল, তাদের শিম খাওয়া উচিত নয়।

পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন যারা: শিমে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকায় গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা সহজে বদহজমে ভোগেন তাদের শিম খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।

আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন এমন ব্যক্তি: শিমে থাকা ফাইটেট আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে। যারা রক্তস্বল্পতায় বা আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের শিম খাওয়ার সময় সঠিক পরিমাণ ও পদ্ধতিতে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ কারণে শিম খাওয়ার আগে এসব ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।