৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে স্ববিস্তার জানতে পারবেন এই পোষ্টে। শরীরে চর্বি জমলে কিছুদিন জোরদার হাঁটাহাঁটি, ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া করে কিছুটা মেদ কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন সবােই । কিন্তু এতে শরীরের সার্বিক ওজন কমলেও, পেটের মেদ সব সময় কমে না। পেটের মেদ কমাতে দরকার ধৈর্য আর শারীরিক কিছু কসরতের। পরিশ্রম করার পাশাপাশি সারা দিনে কাজের ফাঁকেও কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তবেই কমবে পেটের মেদ। তাই আসুন জেনে নিই ৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর সহজ কয়েকটি উপায়।
যদিও ৩ দিনে পেটের মেট কমানোর উপায় বলা হচ্ছে কিন্তু ৩ দিনে কী পেটের মেদ কমানো আসলেই সম্ভব ! এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। অনেকে বলে অন্তত ৭ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় সর্ম্পকিত বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা যায়। তাহলে আপনি কোনটি বিশ্বাস করবেন। আসলে ৩দিন বা ৭দিন কোনটি নয় আপনি এ বিষয়ক যে নিয়ম নীতি রয়েছে তা যদি মেনে চলেন এ কয়দিনে কিছু পেটের মেদ কমতে পারে। পর্যায়ক্রমে কাজ হবে। তাই নিয়মিত পেটের মেদ কমানোর নিয়ম মেনে চলুন।
পানি: প্রচুর পানি পান করুন। পানি শরীরের নানা অসুখ থেকে আপনাকে নিরাপদ রাখবে। পানিস্বল্পতার কারণে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে নানা অসুখ তৈরি হতে পারে। সেসব থেকেও মুক্তি মিলবে নিমেষেই।
গ্রিন টি: এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ এমন কিছু পুষ্টির উপাদান, যা চর্বি কমাতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পানে কমতে শুরু করবে ওজন।
মরিচ: কাঁচা মরিচে আছে ক্যাপসেইসিন নামের একধরনের উপাদান, যা শরীরকে সুঠাম করতে কার্যকর। রান্না করা বা কাঁচা যেকোনো ধরনের মরিচের ঝাল মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয় এবং নিজে থেকেই ক্যালরি বার্ন করে। তাই একটু বেশি ঝালযুক্ত খাবার কমাতে পারে ওজন।
সাগু দানা: যদি আপনি একেবারে নিরামিষভোজী হন, তাহলে ওমেগা থ্রি নিয়ে একদমই ভাবতে হবে না। সাগুদানায় আছে ওমেগা থ্রি, যা ওজন কমাতে সহায়তা করবে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, লোহা ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
আদা-চা: আদা হজমে সাহায্য করে। সারা দিনের দৌড়ঝাঁপে আদা-চা যেমন প্রশান্তি দেবে, তেমনি এটি দুশ্চিন্তাজনিত ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
লেবু-পানি: চিনি ছাড়া তৈরি লেবু-পানি শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। লেবু-পানি লিভার পরিষ্কার রাখে, সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেয় চর্বি ভাঙার কাজও। ত্বকেও ফিরিয়ে আনে জেল্লা।
দারুচিনি: দারুচিনি মেটাবোলিজম বাড়িয়ে শরীরের মেদ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া দারুচিনি শরীরে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
মেদহীন ফিট শরীর কে না চায়। তবে অনিয়মিত জীবনযাপন আর ব্যস্ততায় বেশির ভাগ সময়ই শরীরের দিকে খেয়াল রাখাটা অনেকের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে একটু সচেতন হলে, সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমতে পারে ওজন।
এছাড়া অতিরিক্ত মেদের ফলে বাড়তে পারে ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোমর ও হাঁটুর ব্যথার মতো সমস্যা। এ ছাড়া বহু শারীরিক সমস্যার সঙ্গেও অতিরিক্ত ওজন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আসুন, জেনে নিই ওজন কমানোর কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি—
১. মেদহীন সুস্থ শরীরের মূল শর্ত পরিমিত আহার ও নিয়মিত ব্যায়াম।
২. খাওয়ার সময় পেট পুরে না খাওয়াই ভালো। খাবার ভালো হজম হবে। অতিরিক্ত ক্যালরির সমস্যাও হবে না।
৩. সারা দিনের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি রাখুন। ছোট মাছ খান। পাতে রাখুন প্রচুর শাকসবজি ও ফল।
৪. বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত তেল-মসলা, ঘি-মাখন এড়িয়ে চলুন। রেড মিট খাবেন না। ফাস্টফুড, ডিপ-ফ্রাই করা খাবার, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, অ্যালকোহল না খাওয়াই ভালো। বদলে স্ন্যাক্স হিসেবে খান ফল, স্যালাড, আমন্ড, টক দই ইত্যাদি।
৫. ভাত, ময়দা ও চিনি কম খান। পারলে ঢেঁকি-ছাঁটা চালের ভাত খান। আটার রুটি খান। চা-কফিতে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিন।
৬. বাড়িতেই শরীরচর্চা করুন। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আধাঘণ্টা রাখুন নিজের জন্য। স্কিপিং, বুক ডাউন, পুল-আপের মতো খালি হাতে ব্যায়াম করুন। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সঠিক ফর্ম জেনে নেবেন।
৭. মেদ কমাতে না খেয়ে খালি পেটে থাকেন অনেকে। সেটি খুবই ভুল ধারণা। অল্প পরিমাণে বারবার খান।
৮. কাঁচা রসুনের কয়েক কোয়া সকালবেলা চুষে খান। এই অভ্যাসের ফলে দ্রুত আপনার ওজন কমবে আর পেটের মেদ ঝরবে। কাঁচা রসুন শরীরের রক্তপ্রবাহ সহজ করে। পেটে মেদ জমতে দেয় না।
৯. অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে থাকেন বা শুয়ে পড়েন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। সে জন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে-বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
১০. বেশীরভাগ চাকরিজীবীরই সারা দিন টেবিল–চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। তাই তাঁদের উচিত ৩০-৪০ মিনিট বসে কাজ করার পর উঠে ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা।
১১. পর্যাপ্ত ঘুমান। কারণ নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া ভুঁড়ি না কমার একটা বড় কারণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঘুম ঠিকমতো না হলে ওজন বেড়ে যায়। ঘুম ঠিক না হলে উলটোপালটা খাবার খাওয়ার অভ্যেস বেড়ে যায় আমাদের। এর ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে।
অনেকেই আছেন যারা ওজন ও পেটের মেদ কমানোর চক্করে খাওয়া-দাওয়া একদম কমিয়ে দেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্র্যাশ ডায়েট শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমিয়েছেন, এমন অনেকেই আছেন যারা কয়েকদিন ওজন কমানোর পর তাদের ওজন দ্বিগুণ দ্রুত বৃদ্ধি হতে দেখেছেন।
তাই স্বাস্থ্যকর উপায়ে সঠিকভাবে সুষম খাওয়া-দাওয়ার সাথে ওজন ও পেটের মেদ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। শরীর যেনো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার মাধ্যমে শরীরকে ফিট ও সচল রাখতে হবে।
সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা:
আসলে ৩ দিনে পেটের মেদ সম্পূর্ণ কমেনা। তবে কিছুটা কমে। ৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর জন্য যে কাজ গুলো করতে হয় তা যদি প্রতিদিন আপনি করে থাকেন, তাহলে কিছুদিন পর আপনার পেটের মেদ মোটামুটি কমে যাবে।
পেটে চর্বি কমানোর আর কয়েকটি উপায় নিন্মে তুলে ধরা হলো-
ওজন কমাতে সাত ফল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সাতটি ফল খেলে পেটের চর্বি কমে। নিম্নে সাত ফলের নাম তুলে ধরা হলো।
আঙ্গুর, আপেল, তরমুজ, পেপে, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, কমলা লেবু।
এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা, গরম পানি খেলে কখনই পেটের চর্বি কমেনা। সাধারণ ধারণার বিপরীতে যে গরম জল ওজন কমানোর জন্য ভাল, এমনকি সাধারণ জল আপনাকে পেটের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে । হ্যাঁ, পানির তাপমাত্রা যাই হোক না কেন আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে ওজন কমাতে পারেন।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে, হাটলেও পেটের মেদ কবে বলে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পেটের চর্বি কমাতে দেহের সার্বিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই যথেষ্ট। অন্যদিকে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হালকা জগিং বা জোরে হাঁটার পর দেহে সঞ্চিত চর্বি ভাঙতে শুরু করে এবং পেশি তা ব্যবহার করে। এই সময়ের পর আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট জগিং করলে বা জোরে হাঁটলে প্রতিদিন একটু একটু করে জমানো চর্বি কমতে থাকবে। সব বিষয় খেয়াল রাখলে ও তা মেনে চললে পেটে মেদ কমতে পারে।
শারীরিক পরিশ্রম , যেমন হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটি আপনাকে ক্যালোরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসের সাথে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা চলা করেন, তাহলে আপনি দিনে প্রায় ১০ ক্যালোরি ক্ষয় করতে পারেন । অবশ্যই, আপনি যত বেশি হাঁটবেন এবং আপনার গতি যত দ্রুত হবে, তত বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হবে।
৭ দিনে পেটের মেদ কমানোর জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে যা অনুসরণ করলে আপনি দ্রুত ফলাফল পেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, সুস্থভাবে মেদ কমাতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। প্রথমেই আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। কম ক্যালোরিযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার যেমন সবুজ শাক-সবজি, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং চর্বিহীন মাংস খাওয়া উচিত। পাশাপাশি চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরি। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, যা মেদ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। প্ল্যাঙ্ক, ক্রাঞ্চেস, সাইক্লিং, এবং হাঁটা বা দৌড়ানোর মতো কার্ডিও ব্যায়াম পেটের মেদ কমাতে সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত ঘুমও পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে। ঘুমের অভাবে শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা মেদ জমাতে পারে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত স্ট্রেস কর্টিসলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা পেটের মেদ জমাতে পারে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো সম্ভব।
ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ওটস, গোটা শস্য, সবজি এবং ফলমূল খাওয়া হজমে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা কমায়। এছাড়াও, সুগার মুক্ত চা যেমন সবুজ চা বা আদা চা পান করা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়ক।
৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর কোনো ঔষধ নেই যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ওজন কমানো এবং বিশেষ করে পেটের মেদ কমানো একটি ধীর প্রক্রিয়া, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে সম্ভব। কোনো ধরনের 'ম্যাজিক পিল' বা দ্রুত ফল পাওয়ার ঔষধ খুঁজে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেওয়া একেবারে ঠিক হবে না।
পেটের মেদ কমানোর জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাক-সবজি, প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে, এবং শর্করা ও চিনি পরিমাণে কমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম যেমন কার্ডিও ব্যায়াম (হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার) এবং শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম (যেমন স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক) অত্যন্ত কার্যকর। পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে এবং বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত এবং আরামদায়ক ঘুমও ওজন কমাতে এবং পেটের মেদ কমাতে সহায়ক।
সঠিক উপায়ে ওজন কমাতে হলে ধৈর্য ধরুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে গুরুত্ব দিন।